নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: আওয়ামী লীগের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু সরকারি অর্থ লুটপাট করে বরিশালে পাহাড়সম সম্পত্তি বানিয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ডের গ্যাস্টারবাইন এলাকায় প্রধান সড়ক লাগোয়া বিশাল আয়তনের ভূমি ক্রয় করে গড়ে তুলেছেন একটি রাজপ্রাসাদ।
দূর থেকে বাউন্ডারি ঘেরা বিশাল মাঠ ও গাছ-পালা প্রত্যক্ষ করা গেলেও অভ্যন্তরের প্রাসাদ কখনও কারও চোখ আটকায়নি। সাপ্তাহিক সরকারি ছুটির দিনে সুন্দরী একাধিক তরুণীকে নিয়ে এসে এখানে রাত্রিযাপন করাসহ নেশায় বুদ হয়ে মোজ-মাস্তি করলেও এলাকাবাসী কখনও টের পায়নি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক থাকার সুযোগ নিয়ে ডাকবাংলো স্টাইলের বাসাটি লুটপাট হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনায় লিকু বা তার পক্ষে কেউ সংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশকে লিখিত বা মৌখিক অবহিত করেনি।
অবশ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ লিকুর অঢেল সম্পদ অর্জন নিয়ে ৫ আগস্টের পর দেশের গণমাধ্যমগুলো ধারাবাহিক সংবাদপ্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি জানিয়েছে, শেখ হাসিনার বাবার পৈত্রিক বাড়ি গোপালগঞ্জের সন্তান গাজী হাফিজুর রহমান লিকু প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে কমিশন বাণিজ্য এবং প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার মূল বেতন ৫ হাজার ১০০ টাকা দিয়ে শুরু হলেও দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে প্রায় হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। শুধু নিজের নামে নয়, এমনকি স্ত্রী-শ্যালক ও আত্মীয়-স্বজনের নামে বিঘার পর বিঘা জমি এবং ডজনখানেক বাড়ি নির্মাণ করেছেন, আ’লীগ সরকার পরিবর্তনের পর সেগুলোর সন্ধান মিলছে। তবে লিকু বরিশালেও যে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক তা আলোচনায় আসেনি এবং দুদকও প্রাথমিক তদন্তে এই তথ্য পায়নি বলে জানা গেছে। বরিশালটাইমসের অনুসন্ধানে গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর বরিশালে বরিশালে থাকা এই অবৈধ সম্পদের তথ্য-উপাত্ত্ব উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানী সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের এক তরফা বিতর্কিত নির্বাচনে মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু সারা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত করতে থাকেন, যার অংশ হিসেবে তিনি বরিশাল শহরের দক্ষিণ রুপাতলী এলাকার গ্যাস্টারবাইনসংলগ্ন একাধিক বাসিন্দার কাছ থেকে ভূমি ক্রয় শুরু করেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলের শেষ ১০ বছরের মধ্যে তিনি ওই এলাকায় বিভিন্নজনের কাছ ৫ একর অর্থাৎ ৫০০ শতাংশ জমি কিনে নেন। এবং সেখানে কিছুদিনের মধ্যে ১০ ফুট উচ্চতার বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে সীমানা প্রাচীর তৈরি করাসহ ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
অভিন্ন তথ্য দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, প্রথমে কিছু জমি ৫ লাখ টাকা করে শতাংশ কিনলেও পরবর্তীতে মূল্য বেড়ে যায়। কিন্তু গাজী হাফিজুর রহমান লিকু অর্থের দিকে না চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে অর্থাৎ ১০/১২ লাখ টাকায়ও শতাংশ ক্রয় করেছেন। এমনিভাবে তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত অন্তত অর্ধশত মানুষের কাছ থেকে ৫০০ শতাংশ ভূমি ক্রয় করেন। এবং চারদিকে উঁচু বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে সেখানে আলিশান ভবন নির্মাণ করেন, যেখানে সুইমিংপুলসহ প্রমোদ বিনোদনের জন্য আরও বেশকিছু কাজ করেছেন, আছে পানশালাও।
ভূমি বিক্রেতাদের মধ্যে দুজনের সাথে নাতিদীর্ঘ আলাপচারিতায় জানা গেছে, গাজী হাফিজুর রহমান লিকু প্রথমে যেখানে ভূমি ক্রয় করেন, তার পাশেই ছিল আব্দুল মালেক এবং হালিম হাওলাদারের (ছদ্মনাম) জমি। ২০১৭ সালের দিকে লিকু তাদের দুজনের ২০ শতাংশ ভূমি ক্রয় করার প্রস্তাব দেন, কিন্তু বাজার মূল্য অপেক্ষা দাম কম বলায় তখন মালেক-হালিম তাকে না বলে দেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হলেও কাউকে বুঝতে দেননি, পরে ওই দুজন ভূমি মালিককে চাপে ফেলার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ১০ লাখ টাকা করে শতাংশ কিনে নেন। বাদবাকি সম্পত্তি কারও কাছ থেকে ৮, ১০ ও ১২ লাখ টাকায়ও কিনে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রথমে জমি কিনে চারদিকে বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে রাজকীয় কায়দায় ভবন নির্মাণ করেন গাজী হাফিজুর রহমান লিকু। এবং নির্মাণকাজ চলাকালে তিনি প্রতি মাসেই সাপ্তাহিক ছুটিতে ২/১ বরিশালে আসতেন, প্রত্যক্ষ করতে কাজ। বাড়ি নির্মাণ কাজ শেষ হলে শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব-২ প্রায়শই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশেষ করে শুক্র-শনিবার কথিত রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে সময় কাটাতেন।
বিশ^স্ত সূত্র জানায়, স্বৈরাচারের দোষর লিকু বরিশালে আসলে সর্বদা কালো গ্লাসের গাড়ি নিয়ে আসতেন এবং তাতে ২/৪জন সুন্দরী তরুণী, এমনকি কখনও কখনও অভিনেত্রী বা মডেলদের দেখাও মিলতো। এনিয়ে সেখানে কর্মরত তিনজন নানা আলোচনায় জুড়লেও বিষয়টি আর বাউন্ডারির বাইরে যেতো না। কারণ তাদেরও ভালো বেতন দিতে সেখানে রাখা হয়েছে।
সামান্য বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়ে লিকু গোটা দেশে কী ভাবে এত অর্থ-সম্পদ গড়লেন? এনিয়ে ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা সংবাদপ্রকাশ করলেও বরিশালের এত সম্পদ হিসেবের খাতা থেকে বাদ পড়ে যায়। যদিও অনুসন্ধানী সংস্থা দুদক বলছে, তদন্ত শেষ হয়নি, কেবল মাত্র শুরু হয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, নিজেকে আড়ালে রাখতে সব ধরনের ছলনার আশ্রয় নিয়েছেন লিকু। দালিলিকভাবে নিজ নামে সম্পদ কম দেখিয়ে বেনামে গড়ে তুলেছেন অধিকাংশ অবৈধ সম্পদ। এছাড়া ভিয়েতনামে শত কোটি টাকা পাচার করেছেন, শ্যালককে সেই দেশের ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে পালিয়ে গিয়ে শালা-দুলাভাই দেশটিতে বিলাসী জীবনযাপন করছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে তার নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় কমিশন থেকে প্রকাশ্যে অনুসন্ধানের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দুদক বলছে, গাজী হাফিজুর রহমান লিকু ২০০৯ সালে অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া বছরদশেক পর ২০১৯ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। গোপালগঞ্জের কর অঞ্চল-৪ এর করদাতা তিনি, তারা মোট ৫ ভাই। ২০২৩ সালে এপিএস হিসেবে বাদ পড়ার পর সৌদি আরবে ওমরাহ করতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। সেখান থেকে ভিয়েতনামে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, লিকু প্রথম আয়কর প্রদান করেন ২০০৯-২০১০ করবর্ষে। তার আয়কর ফাইলে সর্বশেষ ২০২৩-২৪ করবর্ষে মূল বেতন ৬৭ হাজার ১০ টাকা, নিট আয় ৯ লাখ ৫ হাজার ৪৪৪ টাকা এবং নিট সম্পদ এক কোটি চার লাখ ৮৭ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। আয়কর রিটার্নের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ৬০ লাখ ২১ হাজার ২৮৮ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ২০২৩ সালের ২৫ জুন স্ত্রী রহিমা আক্তারের নামে ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া মেটলাইফ এলিকোতে ২৮ লাখ টাকার পলিসির সন্ধান পেয়েছে দুদক।
রাজধানী ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর থানাধীন বসিলায় ‘মধু সিটিতে’ এক বিঘা জমির ওপর ৬তলা ভবন নির্মাণ করেছেন লিকু, যার মূল্য কোটি টাকা। এছাড়া রাজধানীর আদাবরের ৬ নম্বর রোডের ৫৮৩ নম্বর বাড়ির এ-৬ ফ্ল্যাটটি তার স্ত্রী রহিমা আক্তারের নামে। ওই বাড়ির মালিক নজরুল ইসলাম রহিমা আক্তারের বন্ধু বলে জানা গেছে। ২৫ মিতালী রোড, আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক, ধানমন্ডি, ঢাকায় লিকুর বেনামে আরও একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। স্ত্রী ও অন্যদের নামে অর্ধডজন প্রাইভেট গাড়ি ও মাইক্রোবাসের খোঁজ পাওয়া গেছে।
লিকুর স্ত্রী রহিমা আক্তারের নামে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানাধীন রামদিয়াতে ‘মেসার্স রাফি অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ’ নামের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার জমির পরিমাণ ৪৭১ শতাংশ এবং দালিলিক মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। খুলনা-ঢাকা-সাতক্ষীরা-গোপালগঞ্জ রুটে ‘ওয়েলকাম এক্সপ্রেস’ নামে ৪২টি যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করছে। এর মধ্যে সাতটি গাড়ি তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। গাড়িগুলো টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কালু ও তার যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি গাড়ির মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরে ওয়েলকাম বাস সার্ভিসেও তার শেয়ার রয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানাধীন কুশলা ইউনিয়নসহ গোপালগঞ্জ সদর থানাধীন কাজুলিয়া গ্রামে ৪০০ বিঘা জমিতে মৎস্যঘের আছে। এছাড়া গোপালগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন থানাপাড়া রোডে পৈত্রিক জমিতে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেছেন, যার বাজার মূল্য দুই কোটি টাকার বেশি।
গোপালগঞ্জের একটি সূত্র জানায়, লিকুর শ্যালক শেখ মো. ইকরাম ওরফে হালিম মোল্লা, তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে মূলত হুন্ডি ব্যবসা করতেন। হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন, তিনি ভিয়েতনামে বসবাস করেন। গাজী হাফিজুর রহমান লিকুর সব অবৈধ অর্থ বৈধ করার কাজে তিনি সহযোগিতা করেন। দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। নিজ বাড়ির পাশে থানাপাড়া রোডে অনির্বাণ স্কুলের দক্ষিণ পাশে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন লিকু। সেখানে তার শ্বশুর-শাশুড়ি বসবাস করছেন।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাকুড় নিলের মাঠের পাশে ১৩ শতাংশ জমির ওপর শ্যালক শেখ মো. ইকরাম ওরফে হালিম মোল্লার নামে (বেনামে) ১০তলা কমার্শিয়াল ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছেন, যা ‘স্বর্ণা টাওয়ার’ নামে পরিচিত। আলোচ্চ্য হালিম মোল্লা তার স্ত্রী স্বর্ণা খানমের নামে এটি গড়েছেন।
অনুসন্ধানী সূত্র জানিয়েছে, শুধু বরিশাল শহরে নয়, পটুয়াখালীর কুয়াকাটার ‘ওশান ব্লু’ নামের রিসোর্টের মালিকও লিকু। তার সেজ ভাই গাজী মুস্তাফিজুর রহমান দিপুর রিসোর্ট দেখাশোনা করেন। সেখানে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানেরও শেয়ার রয়েছে বলে জানা গেছে। গোপালগঞ্জ সদর থানাধীন পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর গোবরা নামক স্থানে লিকুর শ্যালক হালিম মোল্লার শ্যালক রিপন ফকিরের নামে ১৫ শতক জমিতে আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ির সন্ধান মিলেছে। একই ওয়ার্ডে হালিম মোল্লার অপর শ্যালক মিল্টন ফকিরের নামে তিনতলা বাড়ি এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাকুড় নামক স্থানে নিলের মাঠের পাশে ১০ শতাংশ জায়গায় একতলা বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। লিকুর আপন ছোট ভাই গাজী শফিকুর রহমান ছোটনের নামে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২২ শতাংশ জমি, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে শ্যালকের নামে সোয়া কোটি টাকার সাত কাঠা জমি, গোপালগঞ্জের বেদগ্রাম মোড়ে স্ত্রী রহিমা বেগমের নামে ৮ শতাংশ ও ১০ শতাংশ বসতভিটা, গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫ বিঘা জমি, ভায়রাভাই ওমর আলীর নামে পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে চারতলা বাড়ি ক্রয় করেছেন, দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানেও এসব উপাত্ত্ব বেরিয়ে এসেছে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে এবং এত কম বেতনে চাকরি করে আওয়ামী লীগের দোষর লিকু কী ভাবে এত অর্থ-বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেন এমন তথ্য খুঁজতে যখন গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাদের কাজে বেগ পেতে হচ্ছে, ঠিক তখনই বরিশালটাইমসের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসল বরিশালে তার আরও অঢেল সম্পদের নথিপত্র। গোপন এই সম্পদের খবর প্রকাশ হওয়ার পরে বরিশালকেন্দ্রিক গোপন যাতায়াত এবং তার লাইফ স্টাইল শুনে অনেকে রীতিমত ‘থ’ খেয়ে যেতেও পারেন।
জানা গেছে, গ্যাস্টারবাইন এলাকার রাজপ্রাসাদটি দেখভালের জন্য স্থানীয় তিন ব্যক্তিকে ভালো বেতন দিয়ে রেখেছেন লিকু। তারাই বছরের পর বছর পুরো সম্পত্তি দেখাশোনা করেন। এবং ২০২৩ সৌদি আরবে ওমরাহ করতে যাওয়ার আগে লিকু মাসে অন্তত দুইবার সেখানে যেতেন, সাথে থাকতেন সুন্দরী রমনী, যাদের নিয়ে সাপ্তাহিক ছুটির দুদিন মোজ-মাস্তিতে মেতে উঠতেন কথিত রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে। অবশ্য এসব তথ্য কেয়ারটেকারদের একজন মামুন প্রমোদ বিনোদনের বিষয়টি স্বীকার না করলেও বলছেন, স্যারকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কখনও আসতে দেখা যায়নি। তিনি দেশে থাকতে প্রতিমাসে ২/৪ বার বরিশালে আসতে এবং সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে চলে যেতেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ঠিক মাসখানেকের মাথায় অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বর বিশাল আয়তনের ভবনটিতে লুটপাট হয়েছে। কেয়ারটেকার মামুন জানান, বাসাটি থেকে কি পরিমাণ অর্থ-সম্পদ লুট হয়েছে, তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ অর্থ-সম্পদের পরিসংখ্যান শুধু লিকু স্যারের কাছেই থাকতো, তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে তাকে অবহিত করা হয়েছে, তিনি জানিয়েছেন মাত্র ১০ লাখ টাকা বাসায় ছিল। এই ঘটনায় থানা পুলিশ বা অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও অভিযোগ করা হয়নি, জানান মামুন।
ঘটনাস্থলসংশ্লিষ্ট বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, তিনি কিছুদিন হলো যোগদান করেছেন। ফলে আগে কি হয়েছে তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এই সংক্রান্তে কোনো অভিযোগ নেই, এমনটাই অনুমান করছেন তিনি।’
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ১৪৯