নিজস্ব প্রতিবেদক,বরিশাল:: বরিশাল নগরীর কেডিসি এলাকায় থানা ও ডিবি পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানের তথ্য মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে ফাঁস করার অভিযোগ এক পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে কোতয়ালী মডেল থানা ও ডিবি পুলিশের যৌথ এই অভিযান শুরু করে।

বরিশাল নগরীর কেডিসি আব্দুর রাজ্জাক কলোনীতে দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযানে একজন মাদক বিক্রেতাকে আটক করা হলেও কোনো ধরনের মাদক দ্রব্য উদ্ধারে সফলতা পায়নি পুলিশ। অভিযানে রুবেল নামে এক মাদক কারবারিকে আটক করা হয় । সে এলাকার আবুল খায়েরের ছেলে ও চিহ্নিত নারী মাদক বিক্রেতা পারুল বেগমের ছেলে এবং নিজেও মাদক বিক্রি করে।
অন্যদিকে অভিযানের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসী। তাদের দাবি, যেখানে প্রকাশ্যে প্রতিদিন ৩০-৪০ কেজি গাজা সহ সব ধরনের মাদক খুচরা ও পাইকারী বিক্রি হয়, সেখানে এতজন পুলিশ সদস্যের করা অভিযানে বিন্দু মাত্র মাদক উদ্ধার কিভাবে না হয়, তা তাদের বোধগম্য নয়। তাদের স্পষ্ট অভিযোগ, অভিযানের খবর পূর্বেই এলাকার মাদক বিক্রেতাদের কাছে ডিবি পুলিশের মাধ্যমে চলে আসে। তাই সব মাদক বিক্রেতারা নিরাপদে সরে গিয়েছিল এবং পরিচালিত হয়েছে দায়সারা অভিযান।
অন্যদিকে দুপুরে অভিযান হলেও সন্ধ্যায় তা প্রায় পূর্বের রূপে ফিরেছে। অভিযানের সময় সকল মাদক বিক্রেতারা অভিযানের স্থান থেকে কিছুটা দূরে কেডিসি নদীর পাড়ে সরে ছিল এবং পুলিশ চলে যাওয়ার পরেই তারা আবার ফিরে এসেছে। অভিযান চলাকালে দেখা যায়, কোতয়ালী ও ডিবি পুলিশের দুটি দল কেডিসি আব্দুর রাজ্জাক কলোনী এলাকায় প্রবেশ করে ঢাকঢোল পিটিয়ে। তারা সবাই একদিক থেকে প্রবেশ করে কয়েকটি ঘরে তল্লাশি চালায়। এসময় এলাকাবাসীদের মধ্য থেকে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

আটক করা হয় রুবেল নামের এক মাদক বিক্রেতাকে। এর পর কোনো কিছু না মেলায় দেড় ঘণ্টার মতো ঘুরে ফিরে চলে যায়। যাওয়ার পথে মাদক বিক্রয়ের স্থানে থাকা একটি সিসি টিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। যেখানে ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলে মাদক বিক্রেতাদের সনাক্ত করা সম্ভব ছিল, সেখানে ঐ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না তুলে তারা ক্যামেরাটি ভেঙে দেয়। অভিযানের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে এলাকার একটি সূত্র অভিযোগ করে, কেডিসি শুধু নগরীর নয়, এটি পুরো দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় এবং প্রকাশ্য মাদক বিক্রয়ের স্থান। এই এলাকায় কমপক্ষে ৩০-৪০ জন মাদক বিক্রেতা রয়েছে।
এদের নিয়ন্ত্রণে আরও শতাধিক লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদক বিক্রয়ের সাথে জড়িত। কোনো সরকারের আমলে এই এলাকা থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে এলাকায় সাধারণ মানুষের বসবাসের পরিবেশ নেই। কেডিসি এলাকার শিশুরা মাদকের ছড়াছড়ির মধ্যে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ পায় না।
তাই কিছু সচেতন বাসিন্দারা মিলে জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে লিখিতভাবে আবেদন করে মাদক বিক্রয় বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবির জানিয়ো।করসেই দাবির প্রেক্ষিতে গতকাল হয় অভিযানটি।
তবে অভিযানে আসার পূর্বেই গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে আসা মাদক বিক্রেতা নাজমা বেগম( চিয়া নাজুর) কাছে ডিবি পুলিশের কনস্টেবল মোঃ ফারুক) অভিযানের বিষয়টি ফোন করে ফাঁস করে দেয়।
ফোন পাওয়ার সাথে সাথে চায়ের দোকানে অবস্থানরত নাজু সকলকে বিষয়টি অবহিত করে সটকে পড়ে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।
খবর পাওয়ার সাথে সাথে সকল মাদক বিক্রেতারা তাদের মাদক দ্রব্য নিরাপদে সরিয়ে নিজেরা কিছুটা দূরে সরে যায়। আর এই কারণেই ব্যর্থ হয়েছে এই অভিযান, যা পুরোটাই দায়সারা বলে জানায় সূত্রটি।
অন্যদিকে অভিযানে লাভের তুলনায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া কেডিসির সাধারণ বাসিন্দারা। তারা বলে, অভিযানের পর থেকেই তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে মাদক কারবারিরা। তারা বলছে, যতবারই অভিযান হবে, সেই খবর আগেই তারা পেয়ে যাবে। তাই এমন অভিযান প্রতিদিন হলেও কিছু যায় আসে না। কিন্তু যারা মাদক বিক্রয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাদের সুযোগ বুঝে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আরও একটি সূত্রে জানা যায়, এয়ারপোর্ট থানাধীন লুৎফুর রহমান সড়ক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের প্রভাব খাটিয়ে ফারুকের নেতৃত্বে মিম আক্তার পাখি নামে এক তরুণীকে দিয়ে প্ল্যাট বাসায় মাদক ও দেহ ব্যবসা করান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ–পুলিশ কমিশনার সুশান্ত সরকার, পিপিএম সেবা। তিনি বলেন, ডিবি পুলিশের কনস্টেবল মোঃ ফারুক হোসেনকে মাদক বিরোধী অভিযানের তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তীতে ফারুকের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ২৩২