আলোকিত সংবাদ ডেস্ক :: বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) মেডিসিন ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় প্রায় ২ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালের মেডিসিন ভবনের পেছনের একটি বৈদ্যুতিক তার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন দ্রুত হাসপাতালের স্টোর রুমে রাখা তুলায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মেডিসিন ভবনের পাঁচতলা ভবনজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রোগীদের উদ্ধারে দ্রুত তৎপর হন ফায়ার সার্ভিস, আনসার সদস্য ও হাসপাতালের কর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সজিব জানান, হাসপাতালের পেছনে হঠাৎ ধোঁয়া দেখতে পাই। সেখানে গিয়ে দেখি, বৈদ্যুতিক তারে আগুন লেগেছে। প্রথমে বালু দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। পরে আগুন স্টোর রুমের তুলায় ছড়িয়ে পড়লে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।

অগ্নিকাণ্ডের সময় মেডিসিন ভবনে প্রায় ৫০০ রোগী ভর্তি ছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা, আনসার এবং হাসপাতালের কর্মীরা মিলে রোগীদের দ্রুত ভবন থেকে সরিয়ে নেন। বরিশাল কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, চারজন রোগী স্টোর রুমের কাছাকাছি অবস্থানে ছিলেন, তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
রোগীর স্বজনরা জানান, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতালের অধিকাংশ অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র অচল অবস্থায় ছিল, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। তবে ফায়ার সার্ভিসের সময়োচিত পদক্ষেপে বড় কোনো ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়। তবে ধোঁয়ার কারণে মেডিসিন ভবনের ভেতর ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, প্রাথমিকভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্তের পর আগুন লাগার সঠিক কারণ জানানো হবে। পাশাপাশি, হাসপাতালের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজও চলছে।
শেবাচিম হাসপাতাল এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হলেও এখানে প্রায় দুই হাজার রোগী ভর্তি থাকে। এর আগেও এই হাসপাতালে দুইবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
অগ্নিকাণ্ড পরিদর্শন শেষে বরিশাল বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, এ অগ্নিকাণ্ডে কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আমরা দ্রুত রোগীদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে পেরেছি। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে, সে বিষয়ে হাসপাতালের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মাহমুদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় মেডিসিন ভবনের পাঁচতলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে মোট ৫৪৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে ৭০ জন ডেঙ্গু রোগীও ছিলেন। আমরা সবাইকে দ্রুত পুরাতন ভবনের নাক-কান-গলা ইউনিটসহ বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে নিয়েছি এবং তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হয়েছে।
তিনি বলেন,হাসপাতালের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি নিয়ে আমাদের নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। রোগীদের নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সেবায় যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সে বিষয়ে আমরা সবসময় সতর্ক থাকবো।
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ১০৯