নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল :: বরিশাল বিভাগে দিনে-রাতে চলছে বালু লুটের মহোৎসব। অন্তত ৭০টি স্পটে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন হচ্ছে প্রতিদিন। জন্ম দিচ্ছে ভাঙন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের।
বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ নদ-নদী এখন বালু খেকোদের কবলে। কীর্তনখোলা, মেঘনা, তেঁতুলিয়া, বলেশ্বর ও পায়রাসহ প্রধান নদীগুলোতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন চলছে দিনের পাশাপাশি রাতেও।
বিশেষ করে বরিশাল শহরের পাশঘেঁষা চরমোনাই এলাকায় সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় বালু উত্তোলন। রাতভর চলে এই কার্যক্রম, সকালেই জাহাজ বোঝাই হয়ে যায় বালুতে। শ্রমিকরা নিজেরাই অকপটে স্বীকার করছেন, তাদের কার্যক্রমের কোনো বৈধতা নেই।
কীর্তনখোলা নদীর চরমোনাই ও চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পশুরীকাঠি গ্রাম সংলগ্ন নদী থেকে আসলামের নেতৃত্বে, রেজা, সোহাগ খন্দকার, কালু ,নয়ন, সাবেক কাউন্সিলর সামসুদ্দোহা আবেদ মিরা রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু কেটে উত্তলন করেন।
বরিশাল হিজলা উপজেলার নয়াভাঙনী নদীর গুয়াবাড়িয়া, হরিনাথপুর এবং মেঘনা নদীর গঙ্গাপুর, বদরপুর, আবুপুর, কোদালপুর ও পট্টিসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে বালু উত্তোলনের হিড়িক।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতি রাতে নদীর বুক চিরে বালু তোলা হয়; অথচ প্রশাসনের তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী থেকেও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে ভাঙনের ভয়াবহতা। অনেক স্থানে চাষযোগ্য জমি ও ঘরবাড়ি এরইমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত এই বালু সিন্ডিকেটে। প্রশাসনের নাকের ডগায় চললেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
এদিকে, পটুয়াখালীর আগুনমুখা, পায়রা, তেঁতুলিয়া ও পিরোজপুরের বলেশ্বর ও কঁচা নদীর চরখালীসহ অন্তত ৭০টি স্পটে প্রতিদিন চলে এই অপতৎপরতা। আর এতে নদীতীরের মানুষের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও হুমকির মুখে।
হতাশা নিয়ে আল আমিন নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, ‘নদী ভাঙনে আমার বসতভিটা চলে গেছে। প্রতিবাদ করলে হুমকি আসে। প্রশাসন যদি কঠোর না হয়, আমরা সব হারিয়ে ফেলবো।’
জেলা সুজন সভাপতি মোবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরী বলেন, ‘এই অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন শুধু পরিবেশের ক্ষতি করছে না, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও হুমকিতে ফেলছে। স্থানীয় প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া দরকার।’
বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা রাতের বালু উত্তোলন নিয়ে তথ্য নিচ্ছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিভাগীয় কমিশনার মো. রায়হান কাওছার জানান, নদী সুরক্ষায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেবে না।
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ৭৯
