কলাপাড়া প্রতিনিধি ::: সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নাচনাপাড়া চৌরাস্তা মাছ বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার টাকা কালেকশন করা হয়। প্রতিদিন ভোর থেকে মাত্র তিন-চার ঘণ্টায় এ মার্কেট থেকে এ পরিমাণ টাকা আদায় করা হয়। প্রতিদিন সকালে অন্তত দুই থেকে দশ লাখ টাকার মাছ এই মার্কেটে বেচাকেনা হয়। আবার মাছ যারা আড়তে বিক্রি করতে আনেন তাদের কাছ থেকেও শতকরা পাঁচ টাকা হারে টোল আদায় করা হয়।
এছাড়া এই মার্কেটের সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় চট কেন্দ্রীক। অর্থাৎ যারা মাছ বেচাকেনা করেন, তারা হাত বাই হাত জায়গা নিয়ে সেখানে মাছ মজুত করে নিলাম ডেকে কেনাবেচা করেন। ওই নিলাম ডাকা ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট জায়গার (চট) জন্য আয়তন ভেদে দৈনিক সর্বনিম্ন দেড়শ’ টাকা থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা দিতে হয়। এর জন্য একজন কালেকশম্যান রয়েছে। এভাবে অন্তত ৫০টি উঁচু চৌকির মতো (চট) রয়েছে। যেখান থেকে প্রতিদিন আদায় করা হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। মাসে তিন লাখ টাকা।
বছরে কমপক্ষে ৩৫ লাখ টাকা। আর কেনাবেচায় দুই ধাপে শতকরা ১০ টাকা হারে কালেকশন হয় দৈনিক আরও অন্তত ২০ হাজার টাকা। তাতেও বছরে লেনদেন হয় ৭৫ লাখ টাকা। মাছ কিনতে আসা আমতলীর ব্যবসায়ী নুর হোসেন জানালেন, তিনি আট হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের মাছ কিনেছেন। এ জন্য শতকরা পাঁচ টাকা হারে ৪০০ টাকা বিক্রেতাকে দিয়েছেন। এসব চলছে ফ্রি-স্টাইলে।
নাচনাপাড়া চৌরাস্তা মাছ বাজার হিসেবে পরিচিত বাজারটি। সামনের সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে নাচনাপাড়া মডেল মৎস্য আড়ৎ। এভাবে এই মাছ বাজার থেকে বছরে প্রায় কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে আদায় করা হয়। বিগত ছয়টি বছরে এই একটি মার্কেট থেকে অন্তত ছয় কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। অথচ সরকার এক টাকারও রাজস্ব আয় করতে পারেনি। স্থানীয়দের দাবি মাছ বেচকেনায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মাছ বাজারটির গুরুত্ব রয়েছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হলে এখান থেকে সরকারের ফি বছর কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার রাজস্ব আয়ের সুযোগ রয়েছে।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অন্তত ছয় বছর আগে অবৈধ এই মার্কেটটি চালু করেন তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা মশিউর রহমান শিমু। আগস্ট পরবর্তী সময় শিমু নেই। নেই তার নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু তার চালু করা নগদ টাকা আয়ের এই সিস্টেমটি সচল রয়েছে। শুধু আদায়কারী ও জমাকারী বদলেছে। বদলায়নি সিস্টেম। মূলত স্থানীয় দোকানি, ক্রেতা-বিক্রেতারা চায় এই মার্কেটটি বৈধ করে সরকারিভাবে বহাল রাখা দরকার। এতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চাহিদা পূরণ হবে। কিন্তু সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এ বাজার থেকে আদায় করা ফি বছর প্রায় দেড় কোটি টাকা প্রভাবশালী চক্রের পকেটে চলে যাচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, তিনি সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, মাছ বাজারটি সরকারি নিয়ন্ত্রণে ইজারার মাধ্যমে জনস্বার্থে চালু রাখা দরকার রয়েছে।
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ৪৩