বামনা (বরগুনা) সংবাদদাতা ::: উপকূলীয় জেলা বরগুনা উন্নয়নের দিক থকে পিছিয়ে পড়া একটি জনপদ। বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী বরগুনা জেলার বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নদী তীরবর্তী গ্রামের কয়েক হাজার পরিবারের দিন কাটছে ভাঙন আতঙ্কে। ভাঙনের শিকার ব্যবসায়ীসহ ও পরিবার গুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বরগুনার বামনা উপজেলার খাদ্যগুদাম, আবাসন, রামনা লঞ্চঘাট, দক্ষিণ রামনা এলাকার রামনা-ফুলঝুড়ি সড়ক। ভাঙন ঠেকাতে মাঝে মাঝে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে জিওব্যাগ ফেললেও ভাঙন রোধে টেকসই স্থায়ী কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
সম্প্রতি বিষখালী নদীর পানির প্রবাল স্রোত দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বামনা উপজেলার নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে চেচাঁন, বেবাজিয়াখালী, কলাগাছিয়া খাদ্যগুদাম সংলগ্ন আবাসন, অযোধ্যা, রামনা লঞ্চঘাট, দক্ষিণ রামনা গ্রাম ইতিমধ্যে বিলীনের পথে। বামনা কলাগাছিয়া গ্রামে অবস্থিত খাদ্যগুদাম সংলগ্ন আশ্রয়ন প্রকল্পের আবাসন, দক্ষিণ রামনা-ফুলঝুড়ি সড়কসহ দুই-তৃতীয়াংশ এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে এখনই স্থায়ী ব্যবস্থা না নেওয়া হলে যেকোনো সময় জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, নদীর পানিতে তলিয়ে যাবে আশপাশের অন্তত ৩০টি গ্রাম। ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা প্রায় ৪০ বছর ধরে চেচাঁন, কলাগাছিয়া খাদ্যগুদাম আবাসন, দক্ষিণ রামনা এলাকা ভাঙনকবলিত। বিষখালী নদীর করাল গ্রাসে কয়েক হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে, ভিটেমাটি হারিয়ে অনেকেই বর্তমানে বাঁধের পাশে সরকারি জমিতে বসবাস করছে।
প্রতি বছর বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও স্থায়ী ও টেকসই বøক নির্মাণের কোনো পদক্ষেপ তারা নিচ্ছেন না। এমনকি প্রতি বছর বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দায়সারা জিওব্যাগ ফেলে ভাঙনকবলিত মানুষের মুখ বন্ধ রাখেন। ব্যাগ ফেলে যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই আবার ভাঙন শুরু হয়। নদীর এই অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। নিঃস্ব হচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষ। জর”রি ভিত্তিতে নদীভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করেছেন এলাকাবাসী।
দক্ষিণ রামনা এলাকার বাসিন্দা উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য মোঃ রুহুল অমিন শরীফ বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি এই এলাকার ভাঙনে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। রামনা লঞ্চঘাট ও দক্ষিণ রামনা কেবল একটি খেয়া পারাপারের স্থান নয়, এটি ছিল বামনা উপজেলার একটি জণগুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্যবাহী ট্রলার ও লঞ্চ ভিড়তো এখানে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকত শত বছরের চিরচেনা এই স্থানটি। স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতেন, জেলেরা তাজা মাছ নিয়ে আসতেন রামনা বৈকালীণ বাজার ও খোলপটুয়া বাজারে, আর ব্যবসায়ীরা চালাতেন তাদের রমরমা ব্যবসা। কিন্তু কয়েক বছরে ব্যবধানে বিষখালীর আগ্রাসী ভাঙন কেড়ে নিয়েছে সেই সোনালী অতীত। রামনা লঞ্চঘাট ও বাজার শুধু একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়, এটি হাজার হাজার মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন। ইতিমধ্যেই রামনা লঞ্চঘাট বিলীণের পথে আমরা নদী তীরবাসী অচিরেই নদীগর্ভে তলিয়ে যাব।
বামনা উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক ও সাবেক বামনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ রানা বলেন, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর থকে দেখে আসছি বিষখালী নদীর করাল গ্রাসে চেচাঁন, বামনা উপজেলার একমাত্র খাদ্য গুদাম ও খাদ্যগুদাম সংলগ্ন আবাসনে আশ্রয়কৃত পরিবার ঝুঁকির মধ্যেই বসবাস করছে, এছাড়ও খাদ্যগুদামের জেডিরসাথে, সংযোগ রাস্তাসহ ৭/৮ কিলোমিটার কৃষি জমি ও বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে বিলীন হয়ে যায়। রামনা লঞ্চঘাটসহ দক্ষিণ রামনা-খেয়াঘাট সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ববরগুনা জেলার সাথে দৈনিক ৬০০ থেকে ৭০০ লোকজন অফিস ও আদালতের হাজির হওয়ার জন্য যাতায়াত করে। ফ্যাসিবাদী সরকারকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার হাতে পতনের পরে। পানি উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এই এলাকার জনগনের জানমাল নিরাপত্তার স্বার্থে ভাঙ্গন রোধে কাজ করার জন্য সরকারের প্রতিদৃষ্টি আকর্ষন করছি-এই জনপদকে রক্ষা করা না গেলে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে এলাকার অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে বিষখালী নদী তীরবর্তী মানুষের পাশে দাঁড়াবে এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই জনপদকে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে।
বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকাত আরা বলেন, আমি কয়েক দফায় বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেছি। এখন পর্যন্ত ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যেহেতু আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ইতিমধ্যে নদীর পানি দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় পুনরায় বেশকিছু এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে ঝুঁকিতে রয়েছে আবাসনের পরিবার, তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পুনঃরায় বিষয়টি অবহিত করা হবে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, আমরা ইতিপূর্বেই চেচাঁন, বামনা লঞ্চঘাট বøক ও ডাম্পিং এর কাজ শেষ করেছি, এরমধ্যে দক্ষিণ রামনা ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং-এর কাজ শুরু করেছি। বর্ষা মৌসুম ও বণ্যার কথা বিবেচনায় রেখে অতি দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ চিহ্নিত করে ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করা হবে। তবে স্থায়ী বøক স্থাপনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে তা সময় সাপেক্ষ।
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ৭১