• ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশালে ফিল্মি স্টাইলে যুবদল নেতা রনিকে কুপিয়েছে সন্ত্রাসীরা

"আলোকিত সংবাদ ডেস্ক"
প্রকাশিত জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ১৪:৩১ অপরাহ্ণ
বরিশালে ফিল্মি স্টাইলে যুবদল নেতা রনিকে কুপিয়েছে সন্ত্রাসীরা
সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক,বরিশাল::: বরিশাল নগরীতে রনি নামের এক যুবদল নেতাকে ফিল্মি স্টাইলে কুপিয়েছে সন্ত্রাসীরা। মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরত্বে লাইন রোডে বরিশাল মহানগর যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইউসুফ হোসেন রনির ওপর হামলা করে অন্তত ১০/১২ জনের একটি ভয়াত্মক সন্ত্রাসী বাহিনী। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে হামলার শিকার রক্তাক্ত রনি আত্মরক্ষার্থে দৌঁড়ে কোতয়ালি থানায় ঢুকেও রেহাই পাননি। বরং থানা অভ্যন্তরে ঢুকে দুই পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতেও যুবদল নেতাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায় সন্ত্রাসীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছে, রনি রোববার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে লাইনরোডস্থ বাসার নিচে দাঁড়িয়ে বন্ধু মামুনের সাথে কথা বলছিলেন। এমন সময় একটি সিএনজিযোগে ৫/৬ জন এবং দুটি মোটরসাইকেলে আরও চারজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী আকস্মিক সেখানে উপস্থিত হয়ে রনিকে কোপাতে শুরু করে। রক্তাক্ত রনি নিজের জীবন রক্ষার্থে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সন্ত্রাসী ধাওয়া করে ফের কোপাতে থাকে। এবং কোপাতে কোপাতে পার্শ্ববর্তী কোতয়ালি থানা অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। ওই সময় থানার সামনে কজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। থানা পুলিশের এই নির্লুপ্তায় সন্ত্রাসীরা আরও ভয়াত্মক রূপ দেখিয়েছে, যা পুলিশ শুধু চোখ পাকিয়ে দেখেছে।

রনির বন্ধু মামুন জানিয়েছে, হামলার শুরুতেই রনিসহ তিনি ডাক-চিৎকার দিয়ে আশপাশের মানুষ ও পুলিশকে ডাকতে ছিলেন। কিন্তু ভয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে কেউ এগিয়ে আসেনি। এমনকি কোপাতে কোপাতে যখন থানা অভ্যন্তরে নিয়ে যায়, তখন সেখানে দুজন পুলিশ সদস্য দায়িত্বরত থাকলেও প্রতিরোধে এগিয়ে আসেনি। বলা যায়, থানার ভেতরে রনিকে যখন সন্ত্রাসীরা কোপাচ্ছিল তখন পুলিশ সদস্যরা তা প্রত্যক্ষ করেছেন।

রক্তাক্ত রনিকে ওইদিন রাতেই উদ্ধার করে প্রথমে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানী ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেবাচিমে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রনিকে দেখতে যান বরিশাল মহানগর বিএনপি, যুবদল এবং ছাত্রদলের শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীরা। এবং তারা এই সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারপূর্বক দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানিয়েছেন। পাশপাশি কোতয়ালি থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ এবং বিস্ময়প্রকাশ করেছেন।

অবশ্য কোতয়ালি পুলিশ দায় এড়াতে পুরো ঘটনাটিকে থানার বাইরে দাবি করলেও ভিডিওচিত্র ভিন্ন ধারনা দিচ্ছে। একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, রনির অভিযোগই ধ্রুব সত্য।

সিসি ফুটেজে দেখা যায়, রনি কোতয়ালি থানধীন লাইনরোডস্থ বাবরি জামে মসজিদের বিপরিত পাশে মোটরসাইকেলের ওপর বসে বন্ধু মামুনের সাথে কথা বলছিলেন। টিক ওই মুহূর্তে গ্যাসচালিত সবুজ রঙের একটি সিএনজি ও দুটি মোটরসাইকেলযোগে আসে অস্ত্রধারীরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ত্রাসীরা তার ওপর এলোপাতাড়ি কোপ ছুড়তে থাকে। তখন রনি এবং মামুন মোটরসাইকেল ফেলে দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সন্ত্রাসীরা তাদের পিছু নেয় এবং একের পর এক কোপ ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে রনি দৌঁড়ে কোতয়ালি থানায় আশ্রয় নিলে সন্ত্রাসীরা সেখানে প্রবেশ করেও বেশ কয়েকটি কোপ দিয়েছে।

অভিযোগ আছে, থানায় রনি আশ্রয় নেওয়ার পরে দায়িত্বরত পুলিশ চোখ পাকিয়ে না দেখলে হয়তো তাদের আটকানো সম্ভব হতো। কিন্তু পুলিশ সেই ধরনের কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করেনি।

পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতা বা অবহেলার গুরুতর অভিযোগ থাকলেও কোতয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান দাবি করছেন, পুরো ঘটনাটি থানার বাইরে ঘটেছে, যা আসলেই বিস্ময় ও হতাশার। এবং ওসি এও দাবি করেছেন, থানা অভ্যন্তরের সিসি ক্যামেরা অচল রয়েছে। ফলে থানা পুলিশের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর থানা পুলিশের একটি টিম অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে একটি জোরদার অভিযান শুরু করে। ২৯ ডিসেম্বরের ওই মূর্তিমান সন্ত্রাসে জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তারের খবর বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছে পুলিশ। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে শহরের শেষপ্রান্ত উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল লাকুটিয়া সড়কের আবেদ আলী শাহ মাজারসংলগ্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে লিটন সিকদার নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। পাশাপাশি বুধবার একইদিনে যুবদল নেতা রনি হত্যাচেষ্টার ঘটনায় লিটনের সহযোগী রুবেলকেও গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এর আগে রনির ওপর হামলায় ব্যবহৃত সিএনজিসহ চালককে হেফাজতে নেওয়া হয়। তার দেওয়া তথ্য এবং পার্শ্ববর্তী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করা হয়। এরপরেই বুধবার রাতভর অভিযান চালিয়ে রুবেলকে শহরের চৌমাথা এবং লিটনকে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শিহাব জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের পর উভয়ে পুরো ঘটনাটি অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে হামলা চালানোর বিষয়টি স্বীকার করেছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, হামলাকারীরা রনিকে হত্যার উদ্দেশে কুপিয়েছে। কিন্তু তিনি দৌঁড়ে থানা অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ায় সেই কিলিং মিশন আর বাস্তবায়ন না হলেও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রেখে গেছে।

যুবদল নেতা রনিকে থানার ভেতরে ফেলে কোপানোর এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গন তথা গোটা বরিশাল শহরবাসী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এবং এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপে রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

রনিকে কেনো বা কি কারণে হত্যাচেষ্টা করা হলো এই বিষয়টি পুলিশ এখন জানতে না পারলেও বিভিন্ন মাধ্যম নিশ্চিত করেছে, লিটনসহ তার বাহিনী বহুমুখী সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সম্পৃক্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে আগেও এধরনের ঘটনা ঘটানোর বহু উদাহরণ রয়েছে। মূলত তারা বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর সাথে সন্ধিচুক্তি করে ব্যক্তি-বিশেষকে হত্যার টার্গেট করে, যেমনটি হয়েছে রনির ক্ষেত্রেও।

রনিকে শেবাচিম হাসপাতালে দেখতে গিয়ে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারাও এমনটিই অভিযোগ করেছেন। এবং যুবদল নেতার ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি তুলেছেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক এবং সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার এই হামলার ঘটনাকে ভীতিকর সন্ত্রাস হিসেবে অবহিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’