• ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরগুনায় কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ ফসলি জমি দখল করে

"আলোকিত সংবাদ ডেস্ক"
প্রকাশিত অক্টোবর ১১, ২০২৪, ২২:৪৮ অপরাহ্ণ
বরগুনায় কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ ফসলি জমি দখল করে
সংবাদটি শেয়ার করুন....

বরগুনা প্রতিনিধি ::: দেশের উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে ফসলি জমি দখল করে কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও উপজেলা কৃষি যন্ত্রপাতি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে।

ফলে কৃষিজমি ভরাট করে নতুন দালানকোঠা গড়ে ওঠায় দিন দিন বদলে যাচ্ছে শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বিষখালী নদীর পারের এ উপজেলার দৃশ্যপট।

সম্প্রতি সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গেলে স্থানীয়রা জানায়, কিছুদিন আগেও বেতাগী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কৃষি বিভাগের জমিতে আউশ, আমনসহ রবি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ফসল চাষাবাদ হতো। এখন সেই জমিতে শোভা পাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিসের স্থাপনা। দেড় একর ২০ শতাংশ জায়গার মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র চাষিদের জন্য কৃষিসহায়ক প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি যন্ত্রপাতি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হয়। ভবন দুটিতে রয়েছে সম্মেলন কক্ষ, অফিস কক্ষ, গুদামঘর ও গ্যারেজ।

স্থানীয় একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, কৃষিজমি ব্যবহারে সরকারি অনুমতি নেওয়ার বিধান থাকলেও খোদ কৃষি দপ্তরই তা মানছে না। বরং আবাদি জমি ভরাট করে দালানকোঠা গড়ে তুলছে। এ ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিতভাবে ব্যক্তিগত বাসাবাড়ি, অট্টালিকার পাশাপাশি সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নেও একাধিক দপ্তরের উদ্যোগে এ উপজেলায় কৃষিজমির ওপর ভবন, ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা, পুকুর খনন, রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে এখানে ১৯ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন চালের উৎপাদন হয়েছে। তবে দেড় লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত বেতাগী পৌরসভা ও এ উপজেলার বিবিচিনি, বেতাগী, হোসনাবাদ, মোকামিয়া, বুড়ামজুমদার, কাজীরাবাদ ও সড়িষামুড়ি ইউনিয়নে যে পরিমাণ খাদ্যের চাহিদা রয়েছে, সে তুলনায় তা বেশি নয়। সূত্র জানায়, এ উপজেলায় মোট কৃষিজমির পরিমাণ ১২ হাজার ৬৯৭ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদযোগ্য জমি ১২ হাজার ৩৯৭ হেক্টর। কিন্তু অব্যাহতভাবে কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি আর পরিবেশ বিপর্যয়েরও আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক বেতাগী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহসিন খান বলেন, খাদ্যশস্য উৎপাদন ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার অপরিহার্যতার কথা স্মরণ রেখে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদের এসব বিবেচনা ও অনুসরণ করা জরুরি ছিল। কিন্তু খোদ সরকারি দপ্তরই তা করেনি, সেখানে তো ভূমিদস্যুদের কাছে জনসাধারণ আরও অসহায়। এভাবে চলতে থাকলে যা পরবর্তীতে আরও ভয়াবহতার দিকে নিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা বেগম বলেন, যে ধরনেরই জমি হোক এ ক্ষেত্রে জমি ব্যবহারের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমার জানা নেই। তবে সরকারি উন্নয়ন কাজের জন্য যেকোনো জমি ব্যবহার করা যেতে পারে। আবাদি জমি যাতে যথেচ্ছ নষ্ট না হয়, সেজন্য আমরা স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছি।

বেতাগী পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমদ বলেন, এখানে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফসলি জমিতে দালানকোঠা তৈরি ও উন্নয়ন কাজে জমি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। তবে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকেই আইন মেনে চলা ও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় চেষ্টা করছি এ প্রবণতা থেকে উত্তরণের।