ভয়ংকর প্রতারক চক্রের হোতা সোনা শাহীন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে কাউনিয়া থানায় মামলা!
নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল :: বরিশাল বিভাগে নকল স্বর্ন ও শয়তানের নিশ্বাস নামক চেতনানাশক দিয়ে প্রতারনা চক্রের হোতা শাহীন ওরফে সোনা শাহীনের পরিবারের হাতে খুন হয়েছে ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সুরুজ গাজী। সোমবার (৩ মার্চ) বাদ আছর কাউনিয়া হাউজিং বড় মসজিদ প্রাঙ্গনে সুরুজ গাজীর জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জানাজার নামাজে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন শিকদার, সাবেক সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির, বিএনপি নেতা আনোয়ারুল হক তারিন, জেলা বিএনপির নেতা এইচ এম তছলিম উদ্দিন, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ আহমেদ বাবলু, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মাসুদ হাসান মামুন সহ সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা এসময় সুরুজের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং ঘাতক সোনা শাহীনের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া বলেন, মহানগর বিএনপির ৩নং ওয়ার্ড যুব দল’র যুগ্ম আহবায়ক সুরুজ গাজী গত ০২/০৩/২৫ ইং তারিখে সন্ত্রাসীদের হামলায় মৃত্যু বরন করেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর মৃত্যুতে বরিশাল মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারক ও সদস্য সচিব মোঃ জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া সহ আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্য বৃন্দ মর্মাহত ও গভীরভাবে শোকাহত। আমরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক শাহীন, তার স্ত্রী সাবানা এবং ৩ ছেলে মিলে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে তাদের অপকর্মের প্রতিবাদকারী সুরুজ গাজীকে। এসময় শাহীনকে রক্ষা করতে আসা নয়ন হাওলাদার নামের আরেক যুবককে হত্যার চেষ্টায় কোপানো হয়। দুজনকে উদ্ধার করে শেবাচিমে নিলে সুরুজ মারা যায় রোববার রাতে।
দীর্ঘ ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে সোনা শাহীন, তার স্ত্রী কাউনিয়া এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা সাবানা এবং শাহীনের ভায়রা মফিজ মিলে বরিশাল বিভাগ জুড়ে বিশাল এক প্রতারক সিন্ডকেট পরিচালনা করে আসছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা। এর আগেও তার অপকর্মে যারাই বাধা হয়ে দাড়িয়েছে তাদের হয়ত পঙ্গু হতে হয়েছে, নতুবা প্রান হারাতে হয়েছে বেঘোরে। শাহীনের প্রতারনার শিকার হয়ে অসংখ্য নারী পুরুষ হারিয়েছে তাদের সর্বস্ব। নকল স্বর্নের লোভ দেখিয়ে এবং শয়তানের নি:শ্বাস নামক চেতনানাশক ব্যাবহার করে এখনও রমরমা অবস্থায় প্রতারনা চালিয়ে যাচ্ছে সোনা শাহীনের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। নিজে হঠাৎ করে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হয়ে ওঠে সোনা শাহীন। তবে তার তিন ছেলে ইমরান, লিয়ন ও ইমন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত এবং সেই পরিচয়ে সকল অপকর্ম চালিয়ে এসেছে।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দারা জানান, শাহীন কাউনিয়া পিছন স্কুল এলাকার সুদি ব্যাবসায়ী সাবানা নামের নারীকে বিয়ে করে এলাকায় শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে। পূর্বে থেকেই সব ধরনের প্রতারনার কাজের সাথে জড়িত ছিল শাহীন। তারা সাথে এরপর যোগ হয় স্ত্রী ও তার ভায়রা মফিজ। এর পর দুইশ’র অধিক সদস্য নিয়ে গড়ে তোলে শক্তিশালী প্রতারক চক্র। নগরীর বিভিন্ন জনবহুল স্থানে তার সিন্ডিকেটের লোকজন অভিনব পন্থায় নকল সোনার প্রলোভন দেখিয়ে শুরু করে মানুষকে লুট করার কাজ। শুধু নগরীতেই নয় দিনে দিনে তার সিন্ডিকেট প্রতারনা শুরু করে পুরো বরিশাল বিভাগ জুড়ে। অভিযোগ রয়েছে বরিশালে প্রথম শয়তানের নি:শ্বাস নামের চেতনানাশক দিয়ে লুট শুরু করেছে সোনা শাহীনের সিন্ডিকেট। এভাবেই দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে ওঠে শাহীন ও তার প্রতারক পরিবার। এলাকায় স্ত্রী সাবানা এবং বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক রইজ আহমেদ মান্নার অনুসারী তিন ছেলেকে দিয়ে তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে গড়ে তোলে প্রভাবশালী এক প্রতারক চক্র। তার চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময় বরিশালের বিভিন্ন স্থান থেকে আটক হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু তাতে শহীনের কিছুই হয়নি। খোদ শাহীন একাধিকবার অস্ত্র ও মাদক সহ আটক হলেও তার বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যাবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি বলেও জানান স্থানীয়রা।

তার এমন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ এলাকায় কেউ করার সাহস পায়নি এতোদিন। ছেলেরা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে আওয়ামীলীগের আমলে অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে সোনা শাহীন বরিশাল মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের তোষামোদ করে নিজে ৩নং ওয়ার্ডের আহবায়ক হয়ে আরো জোরদার করেছে তার সিন্ডিকেট। ৫ আগস্টের পর ছেলেদের আড়ালে রেখে শাহীন ও স্ত্রী সাবানা আরো ক্ষমতাসীন হয়ে ওঠে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা পরিচয়ে।
তার এমন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করে ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সুরুজ গাজী। দলের নাম বিতর্কিত হয় এমন কর্মকান্ড থামিয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে সোনা শাহীনকে। এতেই ঘটে বিপত্তি। শনিবার এ বিষয় নিয়ে কথাকাটাকাটি হলে রোববার সন্ধায় বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব শহিদুল হাওলাদার সহ নেতাকর্মীরা পারস্পরিকভাবে আলোচনায় বসেন। সেই স্থান থেকে ৩নং ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সুরুজ গাজীকে ডেকে কাউনিয়া শের-ই-বাংলা স্কুলের পেছনে নিয়ে যায় সোনা শাহীন, স্ত্রী সাবানা, তিন ছেলে ইমরান, লিয়ন ও ইমন। এসময় সুরুজের সাথে অপর আহত নয়ন হাওলাদার, মেহেদী, রাজিব ও মানিক নামের যুবকরাও ছিলো। ডেকে নিয়ে কেনো সোনা শাহীনের কাজের প্রতিবাদ করেছে এমন প্রশ্ন তুলে শাহীনের মেঝো ছেলে লিয়ন ধারালো রামদা দিয়ে সুরুজ গাজীর পায়ে কোপ দেয়। ঘটনার তাৎক্ষনিকতায় সুরুজের সাথে থাকা অন্যরা দৌড়ে পালায়। সুরুজ নিজেকে রক্ষা করতে দৌড়ে পাশে থাকা আনিচ নামের ব্যাক্তির ঘরের পাশে পড়ে যায়। সেখানে এসে শাহীন, স্ত্রী সাবানা, তিন ছেলে ইমরান লিয়ন ও ইমন এবং তাদের সাথে আরো ১০/১২ মিলে সুরুজকে উপুর্যপরি কোপানো শুরু করে। শুধু কুপিয়ে ক্ষান্ত না হয়ে সুরুজের মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার পেটের দুই পাশ দিয়ে ড্রীল মেশিন ঢুকিয়ে দেয় ছেলে লিয়ন। সুরুজকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসা একমাত্র ব্যাক্তি নয়ন হাওলাদারকেও তারা কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে চলে যায়। তাদের দুজনকে উদ্ধার করে শেবাচিমে নিলে মৃত্যু হয় সুরুজের।
স্থানীয়রা জানায় সুরুজ ৩ নং ওয়ার্ড যুবদলের দুঃসময়ের কর্মী। আওয়ামী সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছে একাধিকবার। আজ তার মৃত্যু হল দলের ভাবমূর্তি ক্ষূন্ন করা এর হাইব্রীড নেতার হাতে। নিহত সুরুজ গাজী এলাকার একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিল। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তার প্রান গেল। এতিম পরিচয় পেল তার একমাত্র ২ বছরের শিশু সন্তান।
এ বিষয়ে ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব শহিদুল হাওলাদার বলেন, সোনা শাহীন দলের হাইব্রীড নেতা। সুরুজের ত্যাগ রয়েছে দলের দুঃসময়ে। সোনা শাহীনের অপকর্মের প্রতিবাদ করা নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত হয়। তারা হত্যাকান্ড ঘটার কিছুক্ষন পূর্বে বিষয়টি সমাধানের জন্য আলোচনা করছিলেন উভয় পক্ষকে নিয়ে। সেখান থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় সুরুজ গাজীকে। এটি দল বিএনপির জন্য লজ্জাজনক। সোনা শাহীনের মত লোক দলের কেউনা জানিয়ে শহিদুল হাওলাদার আরও বলেন, দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সোনা শাহীনের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থ্াগ্রহন করবে বলে জানিয়েছে। এমন অপরাধী পরিবারের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
শেবাচিমে মুমুর্ষ অবস্থায় থাকা আহত নয়ন বলেন, বন্ধুকে রক্ষার সের্বাচ্চ চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছে। তার চোখের সামনে নৃসংশভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে সোনা শাহীন ও তার পরিবার। এর কঠিন শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল নিশাত বলেন, হত্যার ঘটনায় রোববার রাত ৩ টায় নিহতের বড় ভাই শাহীন গাজী বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মুল অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। এছাড়া হত্যাকারীদের আটকের জন্য অভিযান চলমান রয়েছে। নিহত সুরুজের লাশ ময়না তদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রকৃত দোষীদের শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে কাউনিয়া থানার মাত্র কয়েক গজ এলাকার মধ্যেই যুবদলের এক নেতাকে এভাবে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার খবরটি বরিশাল পুলিশের নাকে খত দিয়ে গেলো। এই ঘটনার মাত্র দু’দিন আগেও বিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেছিলেন মাহে রমজান থেকে ঈদ পর্যন্ত বরিশাল নগরী নিরাপত্তার চাঁদরে ঘিরে রাখা হবে। পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে এধরনের হত্যাকান্ড জনমনে ক্ষোভ ও ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ১১৯