নিজস্ব প্রতিবেদক :: ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে মালিক সমিতি ও নৌ বন্দর কর্মকর্তার যোগসাজে চলছে দুটি লঞ্চ,জিম্মি যাত্রীরা ।ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে দীর্ঘদিন ধরে রোটেশন এর মাধ্যমে দুটি করে লঞ্চ চলাচল করছে। আর এই লঞ্চে কখনোই কোন কেবিন বা সোফা খালি পাওয়া যায় না। বলা হয়, অগ্রীম বুকিং হয়ে গেছে। ফলে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কেবিন ও সোফার যাত্রীরা। এ নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসন থেকে রোটেশন পরিবর্তন করে আরো দুটো লঞ্চ যুক্ত করার একাধিক অনুরোধ জানানো হলেও লঞ্চ মালিক সমিতির স্বেচ্ছাচারিতায় তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে নৌ বন্দর কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে কেবিন ও সোফা সংকট এর জন্য লঞ্চ কর্তৃপক্ষ অনলাইন ক্রেতাদের দায়ী করেছেন। তাদের দাবি অনলাইনে আগেভাগে কেবিন ও সোফা বুকিং দিয়ে পরবর্তীতে টিকিট ব্ল্যাক হচ্ছে। এজন্য অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে নজরদারি বৃদ্ধির পরামর্শ লঞ্চ ব্যবস্থাপকদের।
সরেজমিনে গত (১৮ ফেব্রুয়ারী) মঙ্গলবার বরিশাল নৌ বন্দরে ঢাকামুখী এডভেঞ্চার-১ ও মানামী লঞ্চে একটি সোফা অথবা একটি সিঙ্গেল কেবিনের সন্ধানে ছোটাছুটি করে কোনো লঞ্চেই তা পাওয়া যায়নি।
লঞ্চের ভিতর বসানো টিকিট কাউন্টার থেকে কেরানী ও সুপারভাইজার জানান,‘তিনদিন আগেই সব কেবিন ও সোফা বুকিং হয়ে গেছে’। তবে মানামির সুপারভাইজার তাদের বরিশাল অফিস স্টিমারঘাট জামে মসজিদ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন। মানামি অফিস থেকে টিকিট কাউন্টারে বসা দুজনেই জানান ‘ আগামী ২২, ২৪ ও ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সব কেবিন ও সোফা বুকিং হয়ে গেছে। বেশিরভাগ বুকিং অনলাইনেই হয়ে গেছে।
অথচ গত সোমবারও পারাবত-১২ ও ১৮ একই কথা বলার পরই সন্ধ্যায় কেবিনের জন্য হাকডাক করতে দেখা গেছে লঞ্চ স্টাফদের।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে এডভেঞ্চার লঞ্চের ম্যানেজার হুমায়ন কবির বলেন, এসব টিকিট অনলাইনে কিনে পরবর্তীতে লঞ্চ স্টাফ ও শ্রমিকদের কমিশন দিয়ে বিক্রি করছে একটি চক্র। তিনি অনলাইনে নজরদারি বৃদ্ধির দাবী করেন। যদিও অনুসন্ধানে দেখা গেছে রোটেশন অনুযায়ী লঞ্চের কতিপয় স্টাফরাই এসব কেবিন ও সোফা আগাম বুকিং নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে।
এসময় যাত্রীদের অনেকেই রোটেশন তুলে দেওয়ার দাবি জানান এবং বলেন, সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করতেই এই রোটেশন পদ্ধতি চালু করেছে মালিকপক্ষ।
জবাবে মানামি লঞ্চের ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, মাসে একটি লঞ্চের পিছনে কম হলেও ১৫/২০ লাখ টাকা খরচ রয়েছে। রোটেশন করে এই অবস্থায় মাসে মাত্র চার কি ছয়দিন চলছে একটি লঞ্চ। এতে করে লঞ্চ ব্যবসা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তেলের দামই এ জন্য দায়ী। তেলের দাম কমানোর দাবী করেন তিনি।
এডভেঞ্চার লঞ্চের ম্যানেজার হুমায়ন কবীর বলেন, কেবিন ও সোফা দিয়ে লঞ্চের বানিজ্য হয়না। ডেক পরিপূর্ণ হলে তবেই বাণিজ্য হয়। তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেখানেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। এরউপর সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়ে আমাদের ব্যবসা বন্ধের উপক্রম করেছে। তিনি আরো বলেন, কেবিন ও সোফা বেশিরভাগ অনলাইনে বুকিং হচ্ছে। এখানে নজরদারি বৃদ্ধি জরুরি। অনলাইন ক্রেতারাই লঞ্চের কেবিন ও সোফা বুকিং দিয়ে সংকট তৈরি করছে।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন নৌ বন্দরের কর্মকর্তারাও। নৌ বন্দর এর ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, অগ্রীম বুকিং যে হচ্ছে এটা সত্যি। কিন্তু কারা কিনছে তা খতিয়ে দেখা কঠিন। তবে রোটেশন তুলে না দিলেও বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে আরো দুটি লঞ্চের প্রয়োজন।
বরিশাল নৌ বন্দরের উপপরিচালক শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা সন্ধ্যার পর নৌ ঘাটে অভিযান পরিচালনার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসক এর সাথে কথা বলবেন উল্লেখ করে বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রীর চাপ রয়েছে। তারপরও লঞ্চ মালিক সমিতি কেন রোটেশন পরিবর্তন করছেন না তা জানিনা। এটি আসলে মালিকপক্ষের সিদ্ধান্ত, আমাদের কিছু করার নেই।
লঞ্চ মালিকদের স্বেচ্ছাচারীতায় বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে যাত্রী হয়রানি হচ্ছে এটা পরিষ্কার বলে জানালেন বিআইডব্লিউটিএর মহাপরিচালক কমডোর আরিফ মোস্তফা। তিনি বলেন, আমরা ইতিপূর্বে কয়েকবার মালিকপক্ষকে আরো দুটি লঞ্চ বৃদ্ধি করে চারটি করে রোটেশন করতে বলেছিলাম। লোকসানের অজুহাত তুলে তারা দুটি করে লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রেখেছে।
এ বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য রেজিন উল কবীর বলেন, ডেকতো ফুল হচ্ছে না, যে কারণে রোটেশন তুলে নেওয়া যাচ্ছে না। কেবিন ও সোফা নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে আরো একটি লঞ্চ রোটেশনে যুক্ত করা যায় বলে স্বীকার করেন সুরভি কোম্পানির এই পরিচালক।
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ১২৭