সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত রয়ে গেল,নদীসমূহে চলছে ইলিশ শিকারের মহোৎসব
আলোকিত সংবাদ ডেস্ক ::ইলিশ শিকারের ওপর দেওয়া সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা এবারও উপেক্ষিত রয়ে গেল। বিগত বছরগুলোর মতো নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে বরিশালের নদীসমূহে চলছে ইলিশ শিকারের মহোৎসব। বরং বিগত সময়ের তুলনায় এ বছর ‘মা ইলিশ’ আহরণের খবর বেশি মাত্রায় আসছে। মৎস্য অধিদপ্তর এবং নৌ-পুলিশ সময়বিশেষ সাগর-নদীতে অভিযান চালিয়ে জেলেদের আটক এবং পরে জেল-জরিমানা করলেও ইলিশ নিধন কিছুতেই পুরোপুরি রোধ করা যাচ্ছে না। ইলিশ শিকার রোধে এই ব্যর্থতার নেপথ্য কারণ হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তরকে দুষছে অভিজ্ঞ মহল।
তাদের ভাষায়, প্রতি বছর মা ইলিশ সংরক্ষণে সরকার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করলেও কার্যকর তেমন ভূমিকা লক্ষণীয় নয়, যা এবারও দেখা যাচ্ছে। বলা যায়, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ শিকারে ব্যাপকতা ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশ প্রশাসন কার্যকর নিষ্ক্রিয় থাকা এবং মৎস্য অধিদপ্তরের নীরবতায় এমন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।
কারও কারও অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞায় প্রকৃত জেলেরা ঘরে থাকলেও একশ্রেণির মৌসুমি জেলে সুবর্ণ সময়টি লুফে নিতে নেমে পড়েন নদীতে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি এবং প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মৌসুমি জেলেরা নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে নদীতে নামার সাহস-শক্তি দেখাচ্ছেন।
অবশ্য বিষয়টি বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের খোদ কয়েকজন কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, দেশে আহরিত মোট ইলিশের ৬৬ ভাগ আসে বরিশাল বিভাগ থেকে। বিশাল জলসীমায় ইলিশ মাছ আহরণ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ইকুইপমেন্ট সংকটে ভুগছে মৎস্য বিভাগ। জনবলের সংকটের পাশাপাশি নেই পর্যাপ্ত নৌযানও। ফলে নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতি বছর পুলিশ প্রশাসনসহ অন্যান্য দপ্তরের ওপর নির্ভর করতে হয়। বিশেষ করে ট্রলার ও মাঝি ভাড়া করে নেওয়ায় অনেকাংশে এই অভিযান সফল হচ্ছে না। পেশাদার জেলেরা অভিযোগ করেছেন, মা ইলিশ শিকার পুরোপুরি বন্ধ না হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য দুটি কারণ হচ্ছে, মৌসুমি জেলেদের সঙ্গে মৎস্য বিভাগের মাঠ প্রশাসনের গভীর সম্পর্ক আছে।
এ ছাড়া প্রশাসন যেসব ট্রলার নিয়ে নদীতে যায়, সেই সব ট্রলার মাঝিদের সঙ্গেও জেলেদের সখ্য আছে। সূত্র জানিয়েছে, নদীতে অভিযানে নামার আগেই খবর পৌঁছে যায় জেলেদের কাছে। অর্থের বিনিময়ে ট্রলারের মাঝিরা এই ছলচাতুরি করে এলেও মৎস্য প্রশাসন বরাবরই নির্লিপ্ত থাকছে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মৎস্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চলতি বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের শেল্টারে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ শিকার হলেও এখন প্রেক্ষাপট বদলেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই সময়ে বিএনপির নেতাদের আশ্রয়- প্রশ্রয়ে ইলিশ ধরা হচ্ছে। বিশেষ করে এমন অভিযোগ এসেছে মেঘনা নদী লাগোয়া বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা থেকে।
স্থানীয় প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, মেঘনা নদীর দুর্গম চরসমূহে জেলেরা অবস্থান নিয়ে সেখানে বসতি গড়েছেন এবং সময় বুঝে তারা জাল নিয়ে নদীতে নেমে যান ইলিশ শিকার করতে।
ওই সব স্থানে পুলিশ বা মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযান চালানো প্রায় অসম্ভব। কারণ সেখানে প্রশাসন অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিলেই জেলেরা বেঁকে বসছেন। কখনো কখনো প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে, এতে একধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে সম্ভব্য আক্রমণের আশঙ্কায় আভিবালিকা টিম আর সেদিকে যেফতাচায়।
এই তথ্য অমূলক নয় স্বীকার করে মেঘনাসংলগ্ন হিজলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, অভিযান প্রায় শেষান্তে এলেও প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকার পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। লোকবল ও নৌযানের সংকটে এমন পরিবেশ- পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধিতে মৎস্য অধিদপ্তর ২০০৮ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচি পালন করে এলেও কখনোই সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, এবারের পরিস্থিতি আরও খারাপ। তবে ইলিশ নিধন রোধে ব্যর্থতার দায় নিতে নারাজ মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার ১৫ দিনের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। এই সময়ে অসংখ্য অভিযান করাসহ অসাধু জেলেদের জেল-জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কিছুতেই রোহিত করা যাচ্ছে না। বরং সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জেলেরা মা ইলিশ শিকার আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হতে পারে জনসাচতনতা বৃদ্ধিং নেই উদ্যোগ অবশ্য সরকারকেই নিতে হবে।
এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময়ে মৌসুমি জেলে ও তাদের সোর্স ট্রলার-মাঝিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের একটি দাবি তুলেছেন পেশাদার জেলে সমাজ। মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি ইসরাইল পণ্ডিতও অনুরূপ দাবি জানিয়ে অভিযোগ করেছেন, মা ইলিশ শিকারের সঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবিশেষ সম্পৃক্ত। তাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে কাগজে-কলমে নিষেধাজ্ঞা পালন করে কোনো ফায়দা হবে না।
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ১৬৩