• ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শীত আসছে, খেজুরের গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা

"আলোকিত সংবাদ ডেস্ক"
প্রকাশিত অক্টোবর ২০, ২০২৫, ১৮:৪০ অপরাহ্ণ
শীত আসছে, খেজুরের গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত গাছিরা
সংবাদটি শেয়ার করুন....

ঠোংগা আনে দে বউ, দড়াআনে দে, ঠিলে ধুয়ে দে বউ, গাছ কাটতি যাব…।’ কণ্ঠশিল্পী অনিল হাজারিকার গাওয়া জনপ্রিয় এই আঞ্চলিক গানের গাছির মতোই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মাগুরার গাছিরা।

শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামের পথঘাটে, মাঠের ধারে, কিংবা বসতবাড়ির আঙিনায় দেখা মিলছে খেজুর গাছের রস আহরণের প্রস্তুতি। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।

মাজায় মোটা দড়ি পেঁচিয়ে, হাতে বড় দা আর পায়ের নিচে শক্ত বাঁশের লাঠি বেঁধে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।

গাছের আগায় উঠে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে গাছের মরা পাতা কেটে পরিষ্কার করে তৈরি করছেন ‘চোখ’ যেখান দিয়ে ঝরবে সোনালি খেজুর রস। সেই ছিদ্রে বাঁশের নল বসিয়ে ঝোলানো হচ্ছে ঠিলে, যাতে রাতের শিশিরভেজা রসে ভরে ওঠে গ্রামের সকাল।

একসময় জেলার শালিখা উপজেলার মাঠজুড়ে কিংবা সড়কের দুই পাশে সারি সারি খেজুর গাছ ছিল। কিন্তু এখন সে দৃশ্য অতীত স্মৃতি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও স্থানীয় ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছের অতিরিক্ত ব্যবহার সব মিলিয়ে দিন দিন কমে যাচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী গাছ।

তবুও রসের টানে এখনই অনেকে শুরু করে দিয়েছেন গাছ পরিচর্যার কাজ। যদিও শীত এখনো পুরোপুরি নামেনি, কিন্তু অভিজ্ঞ গাছিরা জানেন, সময় মতো প্রস্তুতি না নিলে ভালো রস পাওয়া যায় না। তবে গাছের সংকটের কারণে এবারও চাহিদামতো রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

শালিখা উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের গাছি ছুরাপ মিয়া বলেন, শীতের শুরুতেই গাছ পরিষ্কার করে প্রস্তুত করি। এরপরই রস সংগ্রহ শুরু হয়। এই রস দিয়েই আমরা তৈরি করি পাটালি আর ঝোলা গুড়। এগুলো বিক্রি করেই চলে আমাদের সংসার।

তালখড়ি ইউনিয়নের ছান্দড়া গ্রামের গাছি কুদ্দুস আলী বলেন, এই বছর তিন পন বা প্রায় ২৪০টি খেজুর গাছ কেটেছি। গত বছরের চেয়ে একটু কম। এখন গাছ কমে গেছেপ্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আবার অনেক জায়গায় ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবেও খেজুর গাছ কাটা হচ্ছে।

সাধারণত প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় চার মাস খেজুর রস ও গুড় সংগ্রহের মৌসুম। খেজুরের রস শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গ্রামীণ জীবনে এই রস ও গুড় একদিকে যেমন শীতের মিষ্টি আনন্দের উৎস, অন্যদিকে স্থানীয় অর্থনীতিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

শ্রীপুর উপজেলার তারাউজিয়াল গ্রামের গাছি রাজেক বিশ্বাস বলেন, এক সময় অনেক খেজুর কাছ কেটেছি তখন অনেক রস সংগ্রহ করতাম। এখনো রসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে কিন্তু দিন দিন শ্রীপুর উপজেলায় খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, খেজুর গাছ একদিকে ছায়া ও অক্সিজেন দেয়, অপরদিকে তার রস ও গুড় গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করে। তাই বিলুপ্তপ্রায় এই ঐতিহ্য রক্ষায় এখনই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

শালিখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে উপজেলায় প্রায় ২৬ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছি যেন সড়কের দুই ধারসহ পতিত জমিতে বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগানো হয়। খেজুর গাছ ফসলের কোনো ক্ষতি করে না, বরং অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই এই গাছ রস ও গুড়ের চাহিদা মেটাতে পারে।

তিনি আরও বলেন কৃষক ও সাধারণ মানুষ যদি একযোগে সচেতন হয়ে উদ্যোগ নেন, তাহলে গ্রামাঞ্চল আবারও ভরে উঠবে খেজুর গাছের সারি আর মিষ্টি রসের মনমাতানো সুবাসে।