• ২৯শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৪ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশালে জুলাই অভ্যুত্থানের ২০ মামলার মধ্যে সাতটি অতি গুরুত্বপূর্ণ. পুলিশি তৎপরতা ঘাটতি

"আলোকিত সংবাদ ডেস্ক"
প্রকাশিত জুলাই ২১, ২০২৫, ১৫:৩২ অপরাহ্ণ
বরিশালে জুলাই অভ্যুত্থানের ২০ মামলার মধ্যে সাতটি অতি গুরুত্বপূর্ণ. পুলিশি তৎপরতা ঘাটতি
সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালে :: জুলাই অভ্যুত্থানের পর বরিশাল মহানগরীর চার থানায় করা ২০টি মামলার মধ্যে সাতটিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে কার্যক্রম চালাচ্ছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ নিয়ে মামলাগুলোর বাদীসহ আইন কর্মকর্তা এবং পুলিশের বক্তব্য পরস্পর-বিরোধী। ভুক্তভোগীদের মতে, পুলিশের কার্যক্রমে গতি নেই। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

২০২৪ সালের ১ থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত বরিশালের জনপদ ছিল উত্তাল। প্রায় প্রতিদিন তৎকালীন সরকার পক্ষের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হতে হয়েছে পদে পদে। অভ্যুত্থান সফলের পর এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বরিশাল মেট্রোপলিটনের চারটি থানায় করেন ২০টি মামলা। এসব মামলায় ১ হাজার ৪৯৫ জনকে নামধারীসহ আসামি করা হয় ৫ হাজার ২৩৭ জনকে। প্রতিটি মামলারই বাদী বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। পুলিশ এসব মামলা থেকে সাতটি মামলাকে মেন্টর কমিটিভুক্ত করে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে কার্যক্রম করছে। কিন্তু এতে তুষ্ট নন মামলার বাদীসহ সংশ্লিষ্টরা।

তাদের দাবি, পুলিশি কার্যক্রম পক্ষপাতদুষ্ট, দৃশ্যমানহীন ও ধীরগতির। তারা দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার ও বিচার চেয়েছেন। তবে দায় নিতে রাজি নয় পুলিশ। এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রো পুলিশের বক্তব্য হলো, ইতিমধ্যেই তারা একটি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে। বাকিগুলোরও কার্যক্রম চলছে। এখানে ধীরগতি দেখা ঠিক নয়। ব্যক্তিগত শত্রুতা উদ্ধারে কাউকে গ্রেফতার করতে বললে পুলিশ তা করতে পারে না।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭টি মামলার মধ্যে একটির চার্জশিট হয়ে গেছে।

অন্যগুলোর তদন্ত চলছে। ওই সময়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার ভিডিও ফুটেজসহ আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে যা সঠিক তা-ই করা হচ্ছে। যদি কেউ বলে থাকে যে, আমরা কাজ করছি না তবে সেটা ভুল। যদি কেউ বলে থাকে যে, আসামি ঘুরে বেড়াচ্ছে তবে সেটা তার ব্যক্তিগত শত্রুতা। আমার জানা মতে, এসব মামলায় যারা জড়িত ছিল তাদের ধরা হয়ে গেছে। মামলার আনুষঙ্গিক আলামত সংগ্রহ করতে গিয়েই বিলম্ব হচ্ছে। তবে খুব দ্রুত সব মামলার কার্যক্রম শেষ হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১৭ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আন্দোলনরত ৩ হাজার ৮০০ জনের নামে করা ১১টি মামলা ইতিপূর্বে প্রত্যাহার করে নিয়েছে পুলিশ।

বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, আমাদের অন্যায়ভাবে ধরে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হতো। তখন আমরা ন্যায়ের পথে যুদ্ধ করেছিলাম। আমার নামে ছিল ৫৪টি মামলা। ৯ বার আমি জেল খেটেছি। নির্যাতনে আমার মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়। এসব কারণে আমরা মামলা করেছি। কিন্তু এসব মামলায় দৃশ্যত কোনো ফল আমরা পাচ্ছি না। যারা এত নির্যাতন করেছে তাদের ধরে বিচারের কাঠগড়ায় নেওয়া হচ্ছে না। আসামি ধরে থানায় দিলেও দুদিন পর তারা বের হয়ে যাচ্ছে। এখন পুলিশ কোনো কাজ করছে না। অথচ আমাদের নামে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিয়েছে। এখন তারা আসামিদের ধরছে না। অনেক আসামিই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশের অনীহার কারণেই অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। পুলিশ এখন নিষ্ক্রিয়।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, আমরা আমাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি। এটা না হলে জনগণ আসামি ধরে পুলিশে দিত না। আমাদের মতো সারা দেশের জনগণের মধ্যেও ক্ষোভ আছে। আছে হতাশা ও রাগ যা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে বেদনার। সরকার ও প্রশানের এ ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া উচিত। ভুয়া কোনো মামলা আমাদের দ্বারা হয়নি। সব মামলারই যথার্থ প্রমাণ রয়েছে।

বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের ভাষ্যমতে, এই সরকারের কাছে আমাদের যে আশা ছিল তা পূরণ হয়নি। আজও ফ্যাসিস্টরা ঘুরে বেয়াচ্ছে। কিন্তু পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যাচ্ছে না। আমাদের দাবি মামলার সব আসামিকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এ নিয়ে বরিশাল জেলা বিএনপির সম্পাদক আবুল কালাম শাহীন বলেন, আমরা লক্ষ করছি বিভিন্ন মামলায় ফ্যাসিবাদের আসামিরা এখনও বরিশাল নগরিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখানে পুলিশি তৎপরতার ঘাটতি রয়েছে। সঙ্গে আইনের গতিও অনেক স্লো। আমরা আশা করি, ফ্যাসিবাদ মামলার সব আসামিরা দ্রুত গ্রেফতার হবে। তা না হলে এই ফ্যাসিস্টদের শাস্তির মুখোমুখি করার জন্য আমরা আবার রাজপথে নামব।

এদিকে বরিশাল মেট্রো পুলিশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭ মামলায় ৭৬৫ জনকে নামধারীসহ মোট আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৯৮৭ জনকে। এদের মধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপজেলা কাউন্সিলর, চেয়ারম্যানসহ ৭১ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে আরও ১৮৯ জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২২ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বরিশালে যারা এসব মামলার সরকারি আইন কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের দৃষ্টিতে মামলাগুলোর ফরোয়ার্ডিংয়ের ক্ষেত্রে পুলিশ আইন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করছে না। পুলিশের এমন দুর্বলতার কারণে আসামিদের জামিন হয়ে যাচ্ছে, ধরে রাখা যাচ্ছে না। তারা পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এ ব্যাপারে বরিশাল আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ফ্যাসিবাদের মামলাগুলোর বিষয়ে পুলিশি কার্যক্রমে অনেক নেগলেজেন্সি আছে। এ বিষয়ে বরিশাল আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট হাফিজ আহমেদ বলেন, বরিশালে করা ফ্যাসিবাদ-বিরোধী মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের পুলিশ এখন পর্যন্ত ধরেনি। যে কয়েকজন ধরা পড়েছে তাও আর্মির সহায়তায় ধরা হয়েছে। যাদের ধরে তাদের আদালতে পাঠানোর সময় দেওয়া ফরওয়ার্ডিংয়ে এমনভাবে ফাঁক রাখা হয় যে তাদের জামিন হয়ে যায়। দায়সারা এসব ফরওয়ার্ডিংয়ের জন্য আমাদের কার্যক্রমও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।