পটুয়াখালীর পর্যটন নগরী কুয়াকাটা বর্তমানে বিপুল পর্যটকে মুখর। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই সর্বত্র পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা গেছে। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশে চারদিন সরকারি ছুটির থাকায় পর্যটকদের এই ঢল বলে জানিয়েছেন কুয়াকাটার পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে আজ গিয়ে দেখা যায়, কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে আশেপাশের ১ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে পর্যটকদের হৈ-হুল্লোড়। সমুদ্রের বুকে কেউ ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, কেউবা আবার দলবেঁধে সাতার কাটছেন। আনন্দ উপভোগের দৃশ্য স্মৃতিপটে ধারণের জন্য কেউ কেউ ছবি তুলছেন।
তবে সৈকতের বেহাল দশা দেখে হতাশ আগত পর্যটকরা। তারা বলছে এত সুন্দর সৈকতের এমন বিশ্রী অবস্থা! যত্রতত্র পড়ে আছে জিও টিউব আর জিও ব্যাগ। এসবে নির্বিঘ্নে উপভোগ করা যায়না আসল সৌন্দর্য।
এ বিষয়ে পর্যটক সোয়াইব বলেন, ‘আমি এই প্রথম কুয়াকাটায় বেড়াতে আসলাম। সৈকত আর সাগরের ঢেউ আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। তবে অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি আছে।’
কুয়াকাটার হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকলে সারাবছর পর্যটকদের আনাগোনা থাকে কুয়াকাটায়। অনেক দিন পরে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। আশা করি সামনের দিনেও এমন দৃশ্য চোখে পড়বে।’
অন্যদিকে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় ব্যস্থতা দেখা গেছে কুয়াকাটার সকল রেস্তোরাঁসহ পর্যটননির্ভর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। হোটেল মোটেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের আবাসিক হোটেলে বুকিং ভালো আছে। পর্যটকদের উপস্থিতিতে স্বস্তি ফিরছে। তাদের আশা এখন থেকে এমন পর্যটকদের আনাগোনা থাকলে তাদের সংকট কাটিয়ে উঠবে খুব শিগগরিই।
এ বিষয়ে বেস্ট সাউদার্ন আবাসিক হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার আবুল কালাম বলেন, ‘টানা ছুটিতে আমাদের আবাসিক হোটেল শতভাগ রিজার্ভেশন করা। অনেকদিন পরে এত পর্যটক আসল কুয়াকাটায়। আমরা পর্যটকদের চাহিদাকে সব সময়ই অগ্রাধিকার দেই।’
পর্যটক আগমনে বেচাবিক্রি বেড়েছে সৈকত লাগোয়া ব্যবসায়ীদের। আগের থেকে ব্যস্ততা বেড়েছে। সৈকত লাগোয়া চা বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, ‘গতকাল থেকে চোখে পড়ার মতো পর্যটক কুয়াকাটায় আসছে। বেচাবিক্রি বাড়তে শুরু করছে। আশা করি ঘাটতি পুষিয়ে উঠতে পারব।’
সৈকতের ক্যামেরাম্যান আল-আমীন বলেন, ‘গতকাল থেকেই মোটামুটি পর্যটক আসতে শুরু হয়েছে। আজ ভালোই পর্যটক বাড়ছে। আমরা আমাদের সংকট কাটাতে পারব।’
আচার বিক্রেতা মো. জসিম বলেন, ‘পর্যটকরা এখন বেশি কেনে না। শুধু ঘুরেফিরে চলে যায়। তবে আগের চাইতে বিক্রি বাড়ছে।’
সৈকত লাগোয়া খাবার হোটেলের ব্যবস্থাপক মো. সেলিম বলেন, ‘বিগত দিনে বেচাকেনা খুবই খারাপ ছিল। গতকাল ভালোই বিক্রি করতে পারছি। আজ আরও বাড়বে। এখন আমাদের দুশ্চিন্তা কাটবে।’
সৈকত লাগোয়া কাপড় ব্যবসায়ী মো. জলিল বলেন, ‘বিগত দেড় মাস ধরে বেচাকিনি নাই। এখন পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে, আশা করছি দ্রুতই আমাদের ব্যবসা–বাণিজ্য স্বরুপে ফিরবে।’
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সেক্রেটারি কেএম জহির বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের সেবায় সকল অপারেটর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা সাধ্যমত সেবা দিতে প্রস্তুত। কয়েকদিন ধরে পর্যটক আসতে শুরু করছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. আনসার উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত। দেশে চলমান অস্থিরতা কেটে যাওয়ার ফলে পর্যটক বাড়ছে কুয়াকাটায়। তাদের নিরাপদ ভ্রমণে যা যা করা দরকার তা সবই করা হবে।’
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ১৯৫