আলোকিত সংবাদ ডেস্ক :: আওয়ামী সরকার পতনের পর পরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল ওরফে মামা টুটুল।
তিনি পালিয়ে গেলেও থেমে নেই তার মৎস্য ব্যবসায় প্রভাব। বরং আত্মগোপনে থেকেই এবার দুর্গাপূজায় বরিশাল থেকে প্রতিদিন কয়েক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করছেন তিনি।
এছাড়াও রপ্তানির উদ্দেশ্যে কয়েক টন ইলিশ মজুদ করেছেন পোর্টরোড পাইকারী মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি নিরব হোসেন টুটুল। বিএনপির অফিস পোড়ানো মামলার এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি নিরব হোসেন টুটুলকে দিয়েই ভারতে ইলিশ রপ্তানির খবরে ক্ষুব্ধ বৈষম্য বিরোধ ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী , অবিভাবক ও বরিশালের মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, ‘শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
সেই সাথে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছে কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ীকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘যেই লাইসেন্সগুলোকে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে তার মধ্যে পাঁচটি লাইসেন্সের মালিক বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল।
আওয়ামী সরকারের আমল থেকেই ওই লাইসেন্সগুলোর মাধ্যমে বরিশাল থেকে একচেটিয়াভাবে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করে সক্ষমতা অর্জন করে আসছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার।
ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পাওয়া নিরব হোসেন টুটুলের লাইসেন্সগুলো হলো- মাহিমা ইন্টারপ্রাইজ, তানিশা এন্টারপ্রাইজ, মাসফি এন্টারপ্রাইজ, নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ এবং এআর এন্টারপ্রাইজ।
পোর্ট রোডের পাইকারী মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ ইয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ‘এবার বরিশাল থেকে কারা ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না।
তবে এবারও বরিশাল থেকে ভারতে রাপ্তানির জন্য ইলিশ কিনছেন আওয়ামী লীগ নেতা নিরব হোসেন টুটুল। তবে তিনি রপ্তানি অনুমতি পেয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নই।
একই কথা জানিয়েছেন, পোর্টরোড পাইকারী মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জহির সিকদার। তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে মোকামে এলসি ইলিশ কিনছেন নিরব হোসেন টুটুলের লোক। বুধবারও সারাদিন তারাই ইলিশ কিনে মজুদ করেছে। তাদের প্রভাবে কারণে অন্য ব্যবসায়ীরা বড় সাইজের ইলিশ কিনতে পারছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘ভারতে পালাতে গিয়ে সীমান্তে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অন্যতম রাজনৈতিক সহচর নিরব হোসেন টুটুল। পরে আদালত থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার কথা বলে ভারতে চলে যান তিনি। বিশ্বস্থ সূত্র বলছে, ভারতে শ্বশুর বাড়ি রয়েছে নিরব হোসেন টুটুলে।
এদিকে, ভারতে থেকেই তার মামা মো. বাবর সিকদারকে দিয়ে বরিশালে নিজের মৎস্য ব্যবসা পরিচালনা করছেন নিরব হোসেন টিটুল ও তার ছোটো ভাই সাগর। এ কথার সত্যতা স্বীকার করে বাবর সিকদার বলেন, ‘এবারও টুটুলের মালিকানাধীন পাঁচটি লাইসেন্সে ভারতে ইলিশ রাপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রত্যেকটি লাইসেন্সের অনুকূলে ৫০ টন করে মোট আড়াইশ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বুধবার থেকে আমরা রপ্তানিযোগ্য ইলিশ কিনতে শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত অনেক টনের মত ইলিশ কিনেছি। তবে নদীতে ইলিশের সংকট রয়েছে। তাই রপ্তানিযোগ্য ইলিশ মজুদ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের দুর্গাপূজায় বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়। সেসময়ও পাঁচটি লাইসেন্সের অনুক‚লে বরিশাল থেকে ইলিশ রপ্তানি করেন নিরব হোসেন টুটুল। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অন্য ব্যবসায়ীদের বরিশাল থেকে ইলিশ পাঠাতে দেননি ভারতে। এ কারণে অনেক জেলে ঘাট বদল করে চলে যান চাঁদপুর ইলিশ মোকামে। এবার ক্ষমতা না থাকলেও আগের মতই বাজারে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন টুটুলের লোকেরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সেখানকার মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়দের দাবী, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করেও ভারতের সাথে সক্ষমতা করে তাদের এজেন্টের লাইসেন্সে ইলিশ নিচ্ছে।এতে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে বলেও জানান তারা।
এ বিষয় জানতে নিরব হোসেন টুটুলকে তার ব্যবহৃত ফোনে কল দিলেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের নবাগত কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমি বরিশালে নতুন যোগদান করেছি, ইলিশ মাছ রাপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ৯০