আলোকিত সংবাদ ডেস্ক::: বরিশালে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিবাদ সমাবেশে আগত বেশিরভাগ হিন্দু জানেন না আট দফা কি? কেন সড়কে এসে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। চিন্ময় দাসের কি করেছেন তাও জানা নেই বেশিরভাগ নারী-পুরুষের। তারা বলেন, মন্দির ও গোত্র নেতাদের ডাকে আসতে হয় আমাদের। না আসলে পরে বিভিন্ন সমস্যা হয় বলে জানালেন একাধিক হিন্দু ভাই-বোন।
তবে ইসকন নেতা চিন্ময় দাস নাম শুনেছেন তারা কিন্তু তাকে ইসকন নেতা হিসাবেই জানেন বেশিরভাগ শ্রমজীবী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। ২৫ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় বরিশালের সদর রোডে চিন্ময় দাসের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানাতে আসা সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের বক্তব্য এটি।
এদের অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, শ্রমজীবী মানুষের এসব জানা বোঝার সময় নেই। প্রতিদিন কাজ করে কেউ মোটরসাইকেল গ্রেজ সামলান, কেউ সেলুন চালান। কেউ আবার দিনমজুর। পূজা-অর্চনা সব নারীরা সামলান। মাঝেমধ্যে মন্দিরে যেতে হয়। তবে তা উৎসব পার্বনে।
বরিশালের শতাধিক মন্দিরের শতাধিক নিয়মনীতি। প্রত্যেক মন্দিরের আলাদা আলাদা কমিটি ও নেতা রয়েছে। এসবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটি ও পুরোহিত। এই কমিটির নেতাদের ডাকে সাড়া না দিলেই তাকে বহিষ্কার করা হয় অথবা একঘরে করে দেওয়া হয় বলে জানালেন বাকেরগঞ্জ থেকে আগত কয়েকজন হিন্দু ভাইবোন।
সম্প্রতি এরকম ঘটনা ঘটেছে বাকেরগঞ্জের গারুড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকজন হিন্দু ভাইদের সাথেও। তারা ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এর সদস্য ফরম পুরন করার কারণে মন্দির নেতাদের তোপের মুখে আছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, ওই এলাকার রঞ্জিত সরকার, সজীব, সঞ্জীব, গোপাল দাস, মিলন দাস ও পরিমল হালদার কিছুদিন আগে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ এর সদস্য হন। এরফলে তাদের ধর্মচ্যুত করা হয়েছে বলে গুজব ওঠে। পরবর্তীতে বিষয়টি মীমাংসা হলেও তারা এখন অনেকটা তোপের মুখে রয়েছেন বলে জানা গেছে। একই ঘটনা ঘটেছে গৌরনদীতে। সেখানেও হিন্দুদের মুসলিম করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকেই বাংলাদেশের পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তুলতে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছিলেন ইসকনের মুখপাত্র চিন্ময় দাস। এমনকি চিটাগং এর সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করার দুঃসাহস দেখিয়ে বিতর্কিত হওয়ার পরও তার উসকানিমূলক সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। যার প্রমাণ দেখা গেছে রংপুরে। এ সংক্রান্ত একটি মামলায় তাকে আটক করে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলে চারিদিকে হিন্দু ঐক্যজোট, সনাতনী জোট, হিন্দু বৈদ্য খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে সারাদেশের পাশাপাশি বরিশালকেও অস্থিতিশীল করে তুলতে ব্যস্ত হয়েছে এই মহলটি। বরিশালের সমাবেশে আগত নারী-পুরুষের কয়েকজনকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো আপনাদের আট দফা দাবী কি? তারা তখন উত্তর দিলেন জানিনা, অমুক দাদা জানেন।
এখানে কেন জড়ো হয়েছেন? প্রশ্নের উত্তরেও একই জবাব দিলেন উজিরপুরের মাধবপাশা থেকে আগত এক দাদা। বললেন, আমাদের নেতা মন্দির কমিটির সেক্রেটারি জানেন বলে তাকে ডাকতে গেলেন তিনি।
ইতিপূর্বে বরিশালের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও একজন সাংবাদিকের পৃষ্ঠপোষকতায় শহীদ মিণার প্রাঙ্গণে হিন্দুদের জমায়েত হয়েছিল হামলা ও ভাংচুরের প্রতিবাদে। সেসময় তাদের প্রশ্ন করা হলে, নির্দিষ্ট করে কোনো হামলা বা ভাংচুরের প্রমাণ দিতে পারেননি কেউই।
বরিশালের কয়েকজন শ্রমজীবী হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাই-বোন বললেন, আমরা যখন জীবন ও জীবিকা নিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছি, প্রতিবেশী মুসলমানদের সাথে সুসম্পর্ক নিয়ে শান্তিতে বসবাস করছি ঠিক তখন একদল আওয়ামী মতাদর্শের হিন্দু সম্প্রদায় নেতারা এই শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
রঞ্জিত দাস, অমল রায়, বিনা রাণী, ইরাবতী হালদারসহ কয়েকজন বলেন, যাদের খেয়েদেয়ে আর কোনো কাজ নাই তারাই বিভিন্ন উসকানিতে রাস্তায় জড়ো হচ্ছে। এটা ওটা প্রতিবাদে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে। এদের বেশিরভাগ অংশই হয় রাজনৈতিক নয়তো সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ বলে জানান মটরসাইকেল মেরামত প্রতিষ্ঠানের মালিক অমল কুমার রায়।
বরিশালে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের সমন্বয়ক বিশ্বজিৎ ঘোষ বিশু জানান, ইসকন নেতা চিন্ময় দাসের গ্রেফতারের প্রতিবাদে এটি একটি প্রতিবাদ মিছিল ছিলো। ২৬ নভেম্বর সকালেও আমরা এই প্রতিবাদ মিছিল করেছি এবং জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন এর কাছে তার মুক্তির দাবীতে স্মারকলিপি দিয়েছি।
তবে চিন্ময় দাস ইসকন নেতা ছাড়া তার সম্পর্কে আর কিছুই জানেন না বিশু ঘোষ। নৃশংসভাবে যখন ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা বুয়েটের মেধাবী ছাত্র বিশ্বজিৎ কে কুপিয়ে হত্যা করলো, বাবু গয়েশ্বর রায়কে যখন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কোপালো তখন আপনি এখনকার মতো হৈ হুল্লোড় করেন নাই কেন? তখন কোথায় ছিল আপনার সনাতনী প্রেম, ভালবাসা? এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনিও ছটকে পড়েন।
বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন বরিশালের জেলা ঈমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, সবকিছুর ভিতর একদল মধ্যস্বত্ব ভোগী রয়েছে। এটা মুসলমানদের মধ্যেও আছে, আবার হিন্দুদের মধ্যেও আছে। এই শ্রেণির মানুষগুলো সবসময় নিজেদের স্বার্থকে বড় করে দেখে। অপরের ক্ষতি নয়, নিজের লাভটাই এদের কাছে প্রাধান্য পায় আগে। আমরা কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছি বরিশালের হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি নষ্ট করতে উঠে পরে লেগেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি পক্ষ। এ নিয়ে ঈমাম সমিতির পক্ষ থেকে বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে এ বিষয়ে করনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এ রকম রাস্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাবী দাওয়া নিয়ে এদের সড়কে নামা উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করার দাবী জানাবো আমরা।
সংবাদটি পঠিত হয়েছেঃ ১৬৯